দেশে পাট উৎপাদনে ফরিদপুর রয়েছে প্রথম অবস্থানে। এ জেলার ব্র্যান্ড হচ্ছে সোনালী আঁশ পাট।
মেলার আয়োজনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে গত ২৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ফরিদপুরের ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট ও পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্যের স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজার সৃষ্টি করে পাটকে বিশ্বের দরবারে সমাদ্রিত করাই এ মেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তবে মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ব্র্যান্ডিং মেলায় সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে সেটিই ব্যর্থ হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ওই মেলায় মোট স্টল রয়েছে ১২০টি। কিন্তু পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মেলার শুরুর পর এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি স্টল চালু হয়নি। পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে মোট ৭৫টি স্টল দেখা গেছে।
মেলায় পাটকল মালিক করিম গ্রুপ, রাজ্জাক জুট ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড ও গোল্ডেন জুট ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের তিনটি স্টল রয়েছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই পাটের সুতা তৈরি করে। কিন্তু এ তিনটি স্টলে পাট, পাটের সুতাসহ পাটজাত ব্যাগ, চট, স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করা হলেও তার কোনোটি বিক্রি করা হচ্ছে না।
করিম গ্রুপের প্রতিনিধি সৈয়দ মো. এনামুল বলেন, ‘আমরা বিক্রির জন্য নয়, বরং প্রদর্শনের জন্যই পাটজাত এসব সামগ্রী দেখানোর আয়োজন করেছি।’
তবে এ ব্র্যান্ডিং মেলার নাম ধরে রাখার জন্য পুরো মেলার মধ্যে শুধুমাত্র একটি স্টল থেকে পাটের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। ‘জেলা প্রশাসকের কর্ণার’ নামে পরিচিত এ স্টলটি পরিচালিত হচ্ছে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে। ওই স্টল থেকে পাটের তৈরি ব্যাগ, স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী ভালো বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার, মহিলা অধিদপ্তরের স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির স্টল, গোল্ডেন সিটিজেন কর্নার, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান রাসিন, সমাজ সেবা অধিদপ্তর, প্রতীক মহিলা সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ এজেন্ডা ২০৩০ স্টল। এসব স্টলে কোন পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
মেলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মেলা কার্যালয় ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি করে স্টল রয়েছে।
মেলা ঘুরে আরও দেখা যায়, মেলার বেশির ভাগই স্টল কসমেটিক্সের। এ জাতীয় দোকান রয়েছে ২২টি। পোশাকের দোকান রয়েছে ১১টি। এগুলোর কোনটি শাড়ি কাপড়, শিশুদের কাপড়, থ্রি-পিস বিক্রি হয়। আবার ব্লেজার, মোদি কোটি, জ্যাকেটও বিক্রি হয় কোনোটিতে।
সমবায় ব্যাংকের নামে একটি স্টল রয়েছে। সেখানে বাটিক ও তাতের শাড়ি প্রদর্শন করা হয়। ওই স্টলের এক কর্মী জানান, যদি কেউ বাটিক ও তাঁতের শাড়ি কিনতে চান তাহলে বিক্রি করা হয়।
ফুচকা, চটপটি, শাহী জিলাপি, চিংড়ির ঝাল ফ্রাই ও শুকনো খাবারসহ খাবারের দোকান আছে মোট ১০টি। এর মধ্যে একটি আছে শীতের পিঠা এবং একটি আছে আইসক্রিমের দোকান। বিসিক পরিচালিত রহমত ট্রেডার্স থেকে শুধু বিক্রি করা হচ্ছে মধু। সেখানে সরিষা, লিচু, মিশ্রিত, সুন্দরবন, বড়ই ও কালোজিরা ফুলের মধু বিক্রি হচ্ছে।
দেখা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পরিচালিত মৃৎশিল্পের একটি দোকান রয়েছে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাটির বিভিন্ন শো-পিস। ওই দোকানের বিক্রেতা সুজন কুমার পাল জানান, বেচা কেনা তেমন হচ্ছে না। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক পরিচালিত ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ এ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত নিজের লেখা, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বিভিন্ন বই বিক্রি হচ্ছে। এ কর্নারে বিক্রেতাদের চাপ প্রচুর, কিন্তু সেইভাবে বই সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান ওই কর্ণারের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মামুনুর রহমান।
মেলায় বেলুন শুটারের দোকান আছে দুটি, ম্যাজিক শেখার জন্য রয়েছে মান ম্যাজিক শপ, জুতা স্যান্ডেল ও ভ্যানিটি ব্যাগের দোকন রয়েছে তিনটি।
আকবর সুজ এর বিক্রেতা ফয়সাল হাসান বলেন, মেলা এখনও জমে নাই। বিক্রিও হচ্ছে না তেমন।
মেলার আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষত শিশুদের জন্য সিরাজগঞ্জ যমুনা শিশু পার্ক বেবিজোনে এক থেকে সাত বছর বয়সী শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মিনি ট্রেন, চরকি, ঘোড়া রাইড, নাগরদোলা ও নৌকার দোলনার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলার মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি শিপ্রা গোশ্বামী বলেন, আমাদের জেলার ব্র্যান্ড যেহেতু পাট, সে কারণে পাটজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিক্রির ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ ছিল। পাশাপাশি অন্যান্য সামগ্রীর দোকানও থাকতে পারে, তবে তা সীমিত পর্যায়ে।
এ ব্যাপারে এ ব্র্যান্ডিং মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম মোল্লার বলেন, ব্র্যান্ডিং মেলা অবশ্যই পাটপণ্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিৎ। কিন্তু শুধু পাটপণ্য দিয়ে মেলা করা যায় না বলেই তার সাথে আমরা তাঁতবস্ত্র, কুটিরশিল্প ও হস্তশিল্পের সমন্বয় ঘটিয়েছি।
মেলায় ২২টি কসমেটিক্সের স্টল বিষয়ে তিনি বলেন, এখন শীতকাল, এসময় মানুষ কসমেটিক্স বেশি ব্যবহার করে। তাই মেলায় এসবের স্টল রাখা হয়েছে।
সরকারের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ফরিদপুরে উৎপাদনমুখী ১২টি পাটকল রয়েছে তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এসেছে মাত্র তিনটি। তবে তারা কোন সামগ্রী বিক্রি করছে না। তারা প্রদর্শনী করছেন, পরে হয়তো চাহিদা অনুযায়ী বড় সরবরাহ দিতে পারবেন।